![]() |
দোয়া ইউনুস |
দোয়া ইউনুস: ফজিলত, পড়ার নিয়ম, উচ্চারণ ও খতম সংখ্যা
দোয়া ইউনুস:
দোয়া ইউনুস হল এক মহিমান্বিত কোরআনিক দোয়া যা নবী ইউনুস (আ.) আল্লাহর কাছে পড়েছিলেন গভীর বিপদের সময়। তিনি যখন মাছের পেটে বন্দী হন, তখন এই দোয়াটি পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও মুক্তি প্রার্থনা করেন।
এই দোয়ার ফলে মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেন। কোরআনে আছে, ‘সে যদি আল্লাহর মহিমা আবৃত্তি না করত, তা হলে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাকে মাছের পেটে থাকতে হতো।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১৪৩-১৪৪)
এই দোয়াটি কোরআনের সূরা আল-আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াতে আছে।
وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুস বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ
দোয়া ইউনুস আরবি:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুস বাংলা উচ্চারণ:
লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।
দোয়া ইউনুস বাংলা অনুবাদ:
হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র মহান, আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারী। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭ )
এই দোয়া ছোট হলেও এর গভীর অর্থ এবং প্রভাব অনেক বড়। এটি বান্দার অনুতাপ ও আল্লাহর রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
দোয়া ইউনুস পড়ার নিয়ম
ওযু অবস্থায় পড়া উত্তম, তবে অযু না থাকলেও হৃদয় থেকে পড়া যায়।
একাকী বা জামাতে উভয়ভাবে পড়া যায়।
ভোর, রাতে বা যেকোনো বিপদের সময়ে পড়া যেতে পারে।
দোয়া ইউনুস শুধু কষ্টের সময় নয়, বরং নিয়মিত পড়লে আত্মার প্রশান্তি মেলে।
দোয়া ইউনুস কতবার পড়লে খতম হয়?
বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দোয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। আপনার যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয়, ততবার পড়বেন।
আলেমরা বলেন, যে কোনো সংখ্যা পড়া যায়। তবে কিছু প্রচলিত আমল আছে,
তবে আমাদের দেশে টাকা কিংবা হাদিয়ার বিনিময়ে হুজুর বা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ভাড়া করে এক লক্ষ পঁচিশ হাজার বার এই দোয়া পড়ে যে ‘খতমে ইউনুস’ পড়ানো হয়, এমন দোয়া কেনাবেচা করা বিদআত। এরকম খতম করানোর কোনো দলিল নেই।
আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার দোয়া ইউনুস পড়বেন, এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে যেই দোয়া করবেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। ভাড়া করে হুজুর দিয়ে দোয়া পড়ানো বা কোরআন খতম পড়ানোর কোনো উপকারিতা বা প্রয়োজন নেই।
তবে আপনারা এইভাবে পড়তে পারেনঃ
৪০ বার — বিপদের সময় পড়া হয়।
১০০ বার — মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার জন্য।
১০০০ বার — বিশেষ নিয়তের সাথে খতম করতে পারেন।
মনে রাখবেন, সংখ্যার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়ত ও মনোযোগ।
বিপদের সময় দোয়া ইউনুস
যখন আপনি বিপদে, হতাশায় বা চরম দুশ্চিন্তায় থাকেন—তখন এই দোয়া আপনার হৃদয়কে প্রশান্তি দেবে।
উদাহরণ:
পরীক্ষার আগে মানসিক চাপ
চিকিৎসা সংকটে থাকা
কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে
মানসিক অশান্তি ও হতাশায়
দোয়া ইউনুস তখন আল্লাহর কাছে আপনার আর্তি পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।
দোয়া ইউনুস পড়ার ফজিলত
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, এই দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা কি শুধু ইউনুস (আ.)-এর জন্যই প্রযোজ্য, না সব মুসলিমের জন্য?
জবাবে নবি (সা.) বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য দোয়াটি বিশেষভাবে কবুল হলেও এটা সব মুসলিমের জন্য সব সময় কবুলের ব্যাপারে প্রযোজ্য। তুমি কি কোরআনে পাঠ করোনি, ‘ওয়া কাজালিকা নুনজিল মুমিনিন’ আর এভাবেই আমি আল্লাহ মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)
যেকোনো বিপদ-মসিবত, দুশ্চিন্তা-পেরেশানি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান এই দোয়া ইউনুসের সাহায্যে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, আল্লাহ তা কবুল করেন।’ অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে এই দোয়া পড়ে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)
আল্লাহর রহমত লাভ হয়
গোনাহ মাফ হয়
বিপদ দূর হয় ও মুক্তির পথ মেলে
আত্মিক শান্তি ও সাহস ফিরে আসে
হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি এই দোয়া দিয়ে দোয়া করে, আল্লাহ তা কবুল করেন।" – (তিরমিজি)
উপসংহার
দোয়া ইউনুস শুধুই একটি বাক্য নয়—এটি আল্লাহর প্রতি ঈমান, ভরসা ও ক্ষমা প্রার্থনার সর্বোত্তম রূপ। প্রতিদিন এই দোয়াটি পড়া অভ্যাস করুন, বিশেষত দুশ্চিন্তা বা বিপদের সময়।
হযরত ইউনুস আ. অক্ষত অবস্থায় মাছের পেটে ৪০ দিন ছিলেন। দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করতে থাকলে আল্লাহ সেখান থেকে মুক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তখন আমি তার (ইউনুসের) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। তাকে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের নাজাত দিয়ে থাকি।’ (সুরা: আম্বিয়া ৮৮)
আল্লাহর রহমত কখনও নিরাশ করে না।
আসুন, আমরা নিয়মিত এই দোয়া পড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি। আরও দোয়া
Comments
Post a Comment